নিজস্ব প্রতিবেদক: রপ্তানি খাতে বিশেষ অবদান রাখায় জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পেয়েছে ৬৬টি প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের গুণগত মানের উন্নয়ন, টেকসই এবং নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও নতুন বাজারে রপ্তানি– এমন কিছু সূচকের ভিত্তিতে পুরস্কারের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করেছে সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার আড়ম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে জাতীয় ট্রফি দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বঙ্গবভন থেকে তিনি ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন। রাজধানীর হোটেল রেডিসনে এ অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে ট্রফি তুলে দেন। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান উপস্থিত ছিলেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানিতে অবদানের জন্য এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
মোট ২৭টি খাতে পুরস্কার দেওয়া হয়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথমবারের মত এবার খাত নির্বিশেষে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি (স্বর্ণ) চালু করা হয়েছে। পুরস্কারটি পেয়েছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে বড় ধরনের সহায়তা করেছেন। অন্যান্য সহায়ক নীতিও নেওয়া হয়েছে। এর ফলে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে দ্রুত রপ্তানি বাড়তে থাকে। এর ফলে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থান ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ এবং এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, তাদের মতো উদ্যোক্তারা ‘৮৫ সালের দিকে ছোট করে ব্যবসা শুরু করে দেশের পোশাক খাতকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন।
তৈরি পোশাকের ওভেন ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক পেয়েছে হা-মীম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রিফাত গার্মেন্টস। হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ ট্রফি গ্রহণ করেন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য প্রথমবারের মত জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে প্রতি বছরই এ পুরস্কার পেয়ে আসছে রিফাত গার্মেন্টস। পুরস্কারের জন্য বিবেচিত বছরে ১৭ কোটি ২৩ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি করে রিফাত গার্মেন্টস। ট্রফি গ্রহণের পর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় এ. কে. আজাদ বলেন, জাতীয় এ স্বীকৃতিতে তিনি আনন্দিত। এ প্রাপ্তির প্রধান অংশীদার রিফাত গার্মেন্টসের কর্মীরা। রপ্তানি পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে। নির্বিঘ্ন গ্যাস, মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ ও সক্ষম বন্দরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা পাওয়া গেলে আগামীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
যেসব প্রতিষ্ঠান ট্রফি পেল: তৈরি পোশাকের ওভেন ক্যাটাগরিতে স্বর্ণ পদক পেয়েছে রিফাত গার্মেন্টস। এ ক্যাটাগরিতে রৌপ্যপদক পেয়েছে এ কে এম নিটওয়্যার এবং ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে তারাশিমা অ্যাপারেলস। নিটওয়্যার ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক পেয়েছে স্কয়ার ফ্যাশনস, রৌপ্যপদক ফোর এইচ ফ্যাশনস এবং ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে জিএমএস কম্পোজিট নিটিং। সব ধরনের সুতা ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক পেয়েছে বাদশা টেক্সটাইলস এবং রৌপ্যপদক পেয়েছে কামাল ইয়ার্ন। আর ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে নাইস কটন।
টেক্সটাইল ফেব্রিক্সে স্বর্ণপদক পেয়েছে এনভয় টেক্সটাইলস এবং রৌপ্যপদক পেয়েছে নোমান উইভিং মিলস। ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে ফোর এইচ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং। হোম ও স্পেশালাইজড টেক্সটাইল খাতে স্বর্ণপদক জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স এবং রৌপ্যপদক পেয়েছে এসিএস টেক্সটাইলস। টেরিটাওয়েলে স্বর্ণপদক পেয়েছে নোমান টেরিটাওয়েল মিলস। ইপিজেডভুক্ত বাংলাদেশি মালিকানাধীন তৈরি পোশাক ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক ইউনিভার্সেল জিন্স এবং রৌপ্যপদক পেয়েছে প্যাসিফিক জিন্স।
হিমায়িত খাদ্য খাতে স্বর্ণপদক বিডি সী ফুড, রৌপ্যপদক এমইউ সী ফুডস এবং ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে জালালাবাদ ফ্রোজেন ফুডস। কাঁচা পাট খাতে স্বর্ণপদক পেয়েছে ইন্টারন্যাশনাল জুট ট্রেডার্স। পাটজাত দ্রব্যে স্বর্ণপদক আকিজ জুট মিলস এবং রৌপ্যপদক পেয়েছে দি গোল্ডেন ফাইবার ট্রেড সেন্টার। চামড়ায় স্বর্ণপদক পেয়েছে এপেক্স ট্যানারি। চামড়াজাত পণ্যে স্বর্ণপদক পিকার্ড বাংলাদেশ, রৌপ্যপদক এবিসি ফুটওয়্যার এবং ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে বিবিজে লেদার গুডস। ফুটওয়্যার খাতে স্বর্ণপদক পেয়েছে বে-ফুটওয়্যার, রৌপ্যপদক এফবি ফুটওয়্যার এবং ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে অ্যালায়েন্স লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার।
কৃষিজ পণ্যে স্বর্ণপদক পেয়েছে মনসুর জেনারেল ট্রেডিং। আর রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পেয়েছে যথাক্রমে হেরিটেজ এন্টারপ্রাইজ এবং আব্দুল্লাহ ট্রেডিং। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যে স্বর্ণপদক পেয়েছে প্রাণ ডেইরি, রৌপ্য প্রাণ এগ্রো এবং ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে হবিগঞ্জ এগ্রো। তিনটিই প্রাণ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান।
হস্তশিল্পজাত পণ্যে স্বর্ণপদক পেয়েছে কারুপণ্য রংপুর। রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পেয়েছে যথাক্রমে ক্ল্যাসিক্যাল হ্যান্ডমেইড প্রডাক্টস এবং বিডি ক্রিয়েশন। প্লাস্টিক পণ্যে স্বর্ণপদক পেয়েছে বেঙ্গল প্লাস্টিক। রৌপ্য পেয়েছে অল প্লাস্ট বাংলাদেশ এবং ব্রোঞ্জ পেয়েছে তানভীর পলিমার।
সিরামিকে স্বর্ণপদক পেয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকস এবং রৌপ্য পেয়েছে আর্টিসান সিরামিকস। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ইউনিগ্লোরি সাইকেল কম্পোনেন্ট স্বর্ণ এবং রৌপ্য পেয়েছে রংপুর মেটাল। ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকসে এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং স্বর্ণ এবং রৌপ্য পেয়েছে বিআরবি কেবল। অন্যান্য শিল্পজাত পণ্যে স্বর্ণপদক পেয়েছে বিএসআরএম স্টিলস। রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পেয়েছে যথাক্রমে- মেরিন সেফটি সিস্টেম এবং ব্রোঞ্জ এশিয়া মেটাল মেরিন সার্ভিস। ওষুধ পণ্যে স্বর্ণপদক পেয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং রৌপ্য পেয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।
ইপিজেডে শতভাগ বাংলাদেশি মালিকানাধীন তৈরি পোশাক ক্যাটাগরিতে ইউনিভার্সেল জিন্স স্বর্ণ এবং প্যাসিফিক জিন্স রৌপ্য পদক পেয়েছে। ইপিজেডে পোশাকের বাইরে অন্যান্য রপ্তানিতে স্বর্ণপদক পেয়েছে ফারদিন এক্সেসরিজ এবং রৌপ্যপদক পেয়েছে আরএম ইন্টারলাইনিংস।
প্যাকেজিং ও এক্সেসরিজ পণ্যে স্বর্ণপদক পেয়েছে মনট্রিমস লিমিটেড। রৌপ্যপদক পেয়েছে এম অ্যান্ড ইউ প্যাকেজিং এবং ব্রোঞ্জ পেয়েছে মেসার্স ইউনিগ্লোরি প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। অন্যান্য প্রাথমিক পণ্যে স্বর্ণ পেয়েছে অর্কিড ট্রেডিং, রৌপ্য ইকো ফ্রেশ ইন্টারন্যাশনাল এবং ব্রোঞ্জ পেয়েছে বাং চুং ট্রেড অ্যান্ড ট্যুরিজম। অন্যান্য সেবা খাতে স্বর্ণপদক পেয়েছে মীর টেলিকম। নারী উদ্যোক্তা খাতে স্বর্ণপদক পেয়েছে স্কয়ার টেক্সটাইলস। রৌপ্যপদক পেয়েছে আল-সালাম ফেব্রিক্স এবং ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে ইব্রাহিম নিট গার্মেন্টস।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.