নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা না থাকায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন সুজনের সম্পাদক।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার রায় বাতিলকে গোজামিলের রায় বলেও উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনকালীন সরকার দরকার। তিনি আরো বলেন, ‘বিদেশে এখন এটা প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে যে, দেশে কর্তৃবাদী শাসনব্যবস্থা তৈরি হয়েছে।’ এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংস্কারের জন্য জাতীয় সনদ নামে ২১ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন তিনি। নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কার আনা, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, স্থানীয় সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণ, আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের প্রস্তাব রয়েছে এই ২১ দফায়।
সুজনের সম্পাদক আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে এ কথা সত্য, তবে নৈতিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এ কারণে দেশে মহাসংকট তৈরি হয়েছে। কারো ক্ষমতাচ্যুতি তিনি দাবি করছেন না, তবে দেশে সুশাসন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হোক, এটা তিনি চান। আর এ জন্যই তাঁর এই ২১ দফা প্রস্তাব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এ দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। তাই একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
আসিফ নজরুল আরও বলেন, আগে গণতন্ত্র গুম হয়েছে, এখন এই রাষ্ট্র গুম হয়ে যাচ্ছে। সঠিক প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু নির্বাচন হতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আর এজন্য গণতান্ত্রিক মানসিকতাসম্পন্ন প্রকৃত জনপ্রতিনিধি প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, গত দুই দশকে নির্বাচিত হয়েও সরকারগুলো ক্ষমতায় গিয়ে স্বৈরাচারী নানা কাঠামো তৈরি করেছে। এ অবস্থার পরিবর্তন হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবারও ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করতে হবে। নিয়মিতভাবে এই নির্বাচন হতে হবে। এটা না হলে দেশের গণতন্ত্র হোঁঁচট খাবে।
মিরপুর থেকে গুম হওয়া ইসমাইল হোসেন বাতেনের স্ত্রী নাসরিন জাহান স্মৃতি বলেন, তাঁর স্বামী চার বছর আগে গুম হয়ে গেলেও র্যাব, পুলিশ ও সরকারের বিভিন্ন মহলের দ্বারে দ্বারে ঘুরে স্বামীকে আজও খুঁজে পাননি তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গুমের শিকার পরিবারের মুখের ভাষা, বুকের ভাষা বোঝার আহ্বান জানান তিনি। গুম হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে জাতিসংঘকে তদন্ত করতে আসতে দেওয়ার অনুমতি দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান। বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ দিতে না পারায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও কঠোর সমালোচনা ও নিন্দা জানান তিনি।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.