দৈনিক বিজয়বাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং কোভিড-১৯ টিকাদানে অসাধারণ সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি জোসে ডব্লিউ ফার্নান্দেজ। দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক পরামর্শ (এইচএলইসি) বৈঠকে এমন প্রশংসা করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি।বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি ফর ইকোনমিক গ্রোথ, এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জোসে ডব্লিউ ফার্নান্দেজ স্ব স্ব দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বেগম শামসুন নাহার এমপি এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলামসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে আরও অংশ নেন দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী সচিব রাষ্ট্রদূত কেলি কেইডারলিং, সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্রিস্টোফার উইলসন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি মিস থেয়া লি এবং সংশ্লিষ্ট মার্কিন দপ্তরের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বর্ধিত অর্থনৈতিক সহযোগিতার মূল উপাদান হিসেবে ব্যবসা থেকে ব্যবসা এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগকে গুরুত্ব সহকারে উত্থাপন করেন সালমান এফ রহমান। এছাড়া মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার, উৎপাদনে মার্কিন বিনিয়োগ বৃদ্ধি, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (ডিএফসি) অর্থায়নের জন্য মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য ডেডিকেটেড ইকোনমিক জোন গঠনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন সালমান এফ রহমান। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের বিশাল পুলের সুবিধা নিয়ে হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করতে মার্কিন আইটি কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা। বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সুসংহত নীতির ধারাবাহিকতাই গত ১৩ বছরে বাংলাদেশের ব্যাপক আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির চাবিকাঠি। বাংলাদেশের শ্রম খাতে অগ্রগতির কথা স্বীকার করে শ্রম ইস্যুতে নিযুক্ত থাকার জন্য একটি নিয়মিত পরামর্শ ব্যবস্থার প্রস্তাব করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি জোসে ডব্লিউ ফার্নান্দেজ।
বৈঠকের দ্বিতীয় অধিবেশনে শ্রম ইস্যুতে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশে আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর তুওমো পাউটিয়াইনেন। অধিবেশনটিতে এএফএল-সিআইও-এর শ্রমিক অধিকার সমন্বয়কারী লরা গুতেরেস, সলিডারিটি সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক শাওনা বাদের-ব্লাউ এবং বাংলাদেশের শ্রমিক প্রতিনিধি কাজী রহিমা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন, পুনর্বিকিরণযোগ্য শক্তি, সামুদ্রিক এবং নীল অর্থনীতি, কোভিড-১৯, পর্যটন ও আতিথেয়তা এবং বেসামরিক বিমান চলাচলের বিষয়ে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছে উভয় পক্ষ। ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি বিমানের ফ্লাইট পুনরায় চালু করতে বিষয়টিকে অগ্রাধিকার এবং দ্রুত পদক্ষেপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের ভিসা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রতিমন্ত্রী আলম। এছাড়া উভয় পক্ষই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির গুরুত্বের বিষয়ে একমত হয়েছে। আগামী বছর (২০২৩ সালে) সুবিধাজনক সময়ে তৃতীয় দফা আলোচনার আয়োজন করতে সম্মত হয়েছে উভয় দেশ।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.