স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : গাজীপুরে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ও টাইলস ব্যবহার করে টেকসই সড়ক নির্মাণের পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এর সম্ভাব্যতা যাচাই করতে ইতিমধ্যে ১০০ মিটার সড়ক নির্মাণ করেছে তারা। নির্মিত সড়ক আগামী এক বছর পর্যবেক্ষণ করা হবে। পরিবেশদূষণ রোধ ও নির্মাণ ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এলজিইডির গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক ও টাইলস পরিত্যক্ত হয়। এতে পরিবেশদূষণ বাড়ছে। বিটুমিনের সাশ্রয় এবং সড়কের স্থায়িত্ব বাড়াতে দেশে সড়ক নির্মাণে প্লাস্টিক ও টাইলসের গুঁড়া ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সড়ক নির্মাণে ইটের খোয়ার বদলে ফেলে দেওয়া টাইলসের গুঁড়া ও কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিটুমিনের সঙ্গে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক গলিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।
জানা গেছে, দেশে প্রথমবারের মতো গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী সড়কঘাটা এলাকায় ১০০ মিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগে দেশে কোথাও সড়ক নির্মাণে এসব উপাদান ব্যবহারের কথা জানা যায়নি।
এলজিইডির গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বারেক বলেন, ‘গাজীপুর একটি শিল্প সমৃদ্ধ জেলা। এখানে টাইলস, পানি ও কোমলপানীয় উৎপাদনকারী অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কারখানায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ টাইলস, প্লাস্টিকের বোতল নষ্ট হয়, যা তারা ফেলে দিয়ে পরিবেশের দূষণ করে। সারা দেশে মানুষ নিজেরাও পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহারের পর ফেলে দিয়ে থাকে। ফেলে দেওয়া এসব টাইলস ও প্লাস্টিকসামগ্রী পুনরায় ব্যবহার করলে পরিবেশদূষণ কমানো সম্ভব। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও নির্মাণ ব্যয় সাশ্রয় হবে।’
নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, পরীক্ষামূলকভাবে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্লাস্টিকের আঠালো বৈশিষ্ট্যের কারণে বিটুমিন কমিয়ে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে ইটের খোয়ার বদলে ফেলে দেওয়া ভাঙা টাইলসের খোয়া মেশানো হয়েছে। এ প্রযুক্তিতে পরীক্ষামূলকভাবে সড়ক নির্মাণে ১০০ মিটার অংশ পাইলট প্রকল্প হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এটি ল্যাবরেটরিতে অধিকতর পরীক্ষা করে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। গাজীপুর সদর উপজেলার সড়কঘাটা এলাকায় ১০০ মিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকৌশলী আব্দুল বারেক বলেন, ‘এই প্রযুক্তিতে ১০০ কেজি বিটুমিনের মধ্যে ৯১ শতাংশ বিটুমিন ও ৯ শতাংশ প্লাস্টিক গলিয়ে মেশানো হয়েছে। সড়কটি নির্মাণে সাব—বেজ অংশে ইটের খোয়ার পরিবর্তে ফেলে দেওয়া টাইলসের খোয়া মেশানো হয়েছে। অর্থাৎ, আগে যেখানে ১০০ কেজি বিটুমিন লাগত, সেখানে ৯১ কেজি বিটুমিন ও ৯ কেজি প্লাস্টিকের মিশ্রণ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গরম করা হয়েছে। যেভাবে কার্পেটিং করা হতো, সেভাবেই মিশ্রণটি সড়কের কার্পেটিংয়ে প্রয়োগ করা হয়েছে। এভাবে বিটুমিনের কার্যক্ষমতা সর্বোচ্চ পাওয়া যায়। পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়াটি দেশে প্রথম গাজীপুরের সড়কেই প্রয়োগ করা হলো।’
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে হাজার হাজার কিলোমিটার হাইওয়ে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। আমরাও বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় এসব জিনিস অধিকতর ব্যবহার করা যায় কি না, তা দেখব। এভাবে সড়ক নির্মাণে পরিবেশদূষণ কমবে এবং নির্মাণ ব্যয় হ্রাস পাবে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.